ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ইতালি অভিবাসীদের কাছে স্বপ্নের গন্তব্য।
প্রতিবছর হাজারো বাংলাদেশি বৈধ ও অবৈধভাবে এই দেশে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন।
তবে যারা বৈধভাবে যেতে চান, তাদের জন্য ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা 2025 সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায়
বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা যেন “সোনার হরিণ”।
এই ভিসার মাধ্যমে আপনি বৈধভাবে ইউরোপে কাজের সুযোগ পেতে পারেন — সরকারিভাবে বা বেসরকারিভাবে।
সরকারিভাবে আবেদন করার উপায়
বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে ইতালি কাজের ভিসার আবেদন করতে হলে নিচের সংস্থাগুলোর মাধ্যমে যেতে হয়:
- বোয়েসেল (BOESL)
- বিএমইটি (BMET)
- প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়
- আমি প্রবাসী অ্যাপ (Ami Probashi App)
এসব সরকারি প্ল্যাটফর্মে নিয়মিতভাবে ইতালি জব সার্কুলার প্রকাশ করা হয়।
আপনাকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে পছন্দের চাকরির জন্য আবেদন করতে হবে।
নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ ও ডকুমেন্ট যাচাই শেষে সরকারিভাবে ইতালি পাঠানো হয়।
বেসরকারিভাবে আবেদন করার উপায়
বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমেও ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেস করা যায়।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও রেজিস্টার্ড এজেন্সি বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
- এজেন্সি আপনার জন্য জব অফার লেটার সংগ্রহ করবে
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়ে ভিসা আবেদন করবে
- তারপর এম্বাসির ইন্টারভিউ ও ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে
সতর্কতা: দালাল বা অবৈধ এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করবেন না। এতে অর্থ এবং সময় দুই-ই নষ্ট হতে পারে।
ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে যে কাগজপত্র লাগে
ইতালিতে বৈধভাবে কাজ করতে হলে নিচের ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে:
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র | মন্তব্য |
---|---|
বৈধ পাসপোর্ট | কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে |
সিভি (CV) | ইংরেজিতে হালনাগাদ করা |
একাডেমিক সার্টিফিকেট | শিক্ষা যোগ্যতা প্রমাণে |
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স | নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য |
মেডিকেল রিপোর্ট | স্বাস্থ্য পরীক্ষার সার্টিফিকেট |
পাসপোর্ট সাইজ ছবি | সাম্প্রতিক |
জব অফার লেটার | ইতালীয় কোম্পানি থেকে |
দক্ষতার সার্টিফিকেট | পেশাগত যোগ্যতার প্রমাণ |
অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট | পূর্বের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে |
ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট | ইংরেজি বা ইতালীয় ভাষা জ্ঞান প্রমাণে |
টিপস: সকল ডকুমেন্ট ইংরেজি বা ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করে নিন, এবং মূল কপির সাথে নোটারাইজড কপি রাখুন।
নিজে নিজে আবেদন করার প্রক্রিয়া
আপনি চাইলে নিজে নিজেও কাজের অফার সংগ্রহ করে আবেদন করতে পারেন।
এর জন্য একটি ইতালীয় কোম্পানির অফার লেটার প্রয়োজন, যা সরাসরি এমবাসিতে জমা দিতে হবে।
ইতালির বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে হয়।
সব কাগজপত্র যাচাই শেষে ভিসা অনুমোদন দেওয়া হয়।
ইতালিতে কাজের বেতন ২০২৫
ইতালিতে কাজের বেতন কর্মীর পেশা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
সাধারণত বৈধ কর্মীদের মাসিক আয় ৮০০ ইউরো থেকে ৩৫০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কাজের ধরণ | আনুমানিক বেতন (ইউরো) |
---|---|
ক্লিনার / হোটেল স্টাফ | ৮০০ – ১২০০ |
মেকানিক / টেকনিশিয়ান | ১২০০ – ২০০০ |
কৃষিকাজ | ১০০০ – ১৫০০ |
কনস্ট্রাকশন শ্রমিক | ১২০০ – ১৮০০ |
ড্রাইভার / ডেলিভারি | ১২০০ – ২০০০ |
পেশাজীবী (ইঞ্জিনিয়ার, টেক এক্সপার্ট) | ২৫০০ – ৩৫০০ |
অবৈধ প্রবাসীরা তুলনামূলক কম বেতন পান এবং তাদের কাজের পরিবেশও অনিরাপদ।
তাই সর্বদা বৈধ পথে যাওয়াই শ্রেয়।
ইতালিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
ইতালির অর্থনীতি শিল্প ও কৃষিনির্ভর।
তাই এখানে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা খুব বেশি।
উচ্চ চাহিদার কাজের ক্ষেত্রসমূহ
- কনস্ট্রাকশন শ্রমিক
- ইলেকট্রিশিয়ান
- মেকানিক
- ড্রাইভার ও ডেলিভারি সার্ভিস
- প্লাম্বার
- ক্লিনার ও হাউসকিপিং
- কৃষি শ্রমিক
- রেস্টুরেন্ট ও হোটেল সার্ভিস
পরামর্শ: যেসব কাজের চাহিদা বেশি, সেগুলোর ওপর দক্ষতা অর্জন ও সার্টিফিকেশন নিয়ে আবেদন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
শেষ কথা
২০২৫ সালে ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এক বিশাল সুযোগ।
ইউরোপে বৈধভাবে কাজ করে স্থায়ী আয় এবং উন্নত জীবনযাপন সম্ভব।
তবে আবেদন করার আগে নিশ্চিত হোন আপনি সঠিক চ্যানেল ও যোগ্য প্রক্রিয়ায় যাচ্ছেন কিনা।
ইতালি এখন বৈধ অভিবাসনের নতুন দিগন্ত — সঠিক প্রস্তুতিই পারে আপনার ইউরোপের স্বপ্ন পূরণ করতে! 🇮🇹