এশিয়ার অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে জাপান একটি সুপরিচিত নাম। প্রযুক্তি, শিল্প ও উৎপাদন খাতে দেশটির উন্নতির ধারাকে বিশ্বের অনেক দেশই অনুসরণ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষ জাপানে কাজ করতে যেতে আগ্রহী।
জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায় (সরকারি পদ্ধতি)
বাংলাদেশ সরকারিভাবে জাপানে কর্মী পাঠানোর কাজটি BMET (বিএমইটি) এবং TTC (Technical Training Center) এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। সরকারি পদ্ধতিতে ভিসা প্রসেসিং খরচ তুলনামূলকভাবে কম, স্বচ্ছ এবং নিরাপদ।
Japan Ministry of Health, Labour and Welfare: ホーム|厚生労働省
Japan External Trade Organization: ジェトロ(日本貿易振興機構) | ジェトロ
সরকারিভাবে জাপানে যেতে যা করতে হবে
- BMET-এর ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
নিজের নামে একটি প্রোফাইল তৈরি করে তথ্য যুক্ত করতে হয়। - চাকরির সার্কুলার BMET–এ প্রকাশ হলে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
- যোগ্য প্রার্থীদের স্কিল টেস্ট নেওয়া হয়।
সাধারণত জাপানি ভাষা (JLPT N4/N5), শারীরিক সক্ষমতা, এবং মৌলিক দক্ষতা যাচাই করা হয়। - নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
যেমন—জাপানি ভাষা, সংস্কৃতি, ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ। - প্রসেসিং সম্পন্ন হলে ভিসা প্রদান করা হয়।
সরকারি পদ্ধতিতে যাত্রা সফল হলে কর্মীরা অনেক বেশি নিরাপদ পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পান। এছাড়াও, প্রতারণার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত ২০২৫? (Minimum Wage in Japan 2025)
জাপান বিশ্বে সর্বোচ্চ শ্রম মজুরি প্রদানকারী দেশগুলোর একটি। তবে দেশটির সর্বনিম্ন বেতন একেক প্রিফেকচার বা এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন। জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয় প্রতি বছর বেসিক মিনিমাম ওয়েজ হালনাগাদ করে।
২০২৫ সালে জাপানের সর্বনিম্ন বেতন (প্রতি ঘণ্টা):
- ৭৯০ ইয়েন থেকে ১১১৩ ইয়েন (এলাকা অনুযায়ী পরিবর্তনশীল)
টোকিও, ওসাকা, ইয়োকোহামা, নাগোয়া—এইসব বড় শহরে বেতন সাধারণত বেশি থাকে। অন্যদিকে তুলনামূলক গ্রামীণ এলাকাগুলোতে wage কিছুটা কম।
সাপ্তাহিক ও মাসিক আয় হিসাব (Basic Calculation 2025)
- সাপ্তাহিক কাজের সময়: ৪০ ঘণ্টা
- ওভারটাইম সীমা: সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৫ ঘণ্টা
- মাসিক ওভারটাইম সীমা: ৪৫ ঘণ্টা
মাসিক মোট বেতনের আনুমানিক হিসাব
- সর্বনিম্ন: প্রায় ১,৪০,০০০ টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রা)
- মাঝারি: ১,৮০,০০০ – ২,০০,০০০ টাকা
- দক্ষ কর্মীরা: ২,৫০,০০০ – ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে।
জাপানিজ নাগরিকদের গড় বেতন (২০২৫)
- ৩,৪৭০ USD ≈ ৪,১৬,০০০ টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়)
যেসব বাংলাদেশি কাজের ভিসা নিয়ে জাপানে যান, তারা শুরুতেই মাসে অন্তত দেড় লাখ টাকা আয় করতে পারেন। দক্ষতা বাড়লে এ আয় আরও বেশি হতে পারে।
জাপানে কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ২০২৫?
জাপানে জনশক্তির ঘাটতি দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে কম জন্মহার ও বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অনেক সেক্টরেই শ্রমিকের প্রয়োজন বাড়ছে।
২০২৫ সালে জাপানে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন কাজগুলো হলো:
১. কেয়ারগিভার / নার্সিং (Caregiver / Nursing)
জাপানের বয়স্ক জনগোষ্ঠী দ্রুত বাড়ছে। ফলে কেয়ারগিভারদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও চাকরির নিরাপত্তা অত্যন্ত ভালো।
২. কৃষি শ্রমিক
জাপানের কৃষিখাত প্রযুক্তিনির্ভর হলেও শ্রমিক সংকট তীব্র। সিজনাল ও পার্মানেন্ট উভয় ধরণের কাজ পাওয়া যায়।
৩. কনস্ট্রাকশন শ্রমিক
টানেল, ব্রিজ, রোড, বিল্ডিং—বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টে নির্মাণশ্রমিকদের নিয়মিত চাহিদা থাকে।
৪. ফ্যাক্টরি ও ম্যানুফ্যাকচারিং কাজ
- অটোমোবাইল
- ইলেকট্রনিক্স
- রোবোটিক্স
- ফুড প্রসেসিং
এ সেক্টরগুলোতে স্কিলড ও আনস্কিলড উভয় কর্মীর দরকার হয়।
৫. রেস্টুরেন্ট ও হসপিটালিটি
- ওয়েটার
- কুক
- ডেলিভারি ম্যান
- কিচেন হেলপার
৬. অন্যান্য জনপ্রিয় কাজ
- প্লাম্বার
- ইলেকট্রিশিয়ান
- পেইন্টার
- কার ওয়াশ
- প্যাকেজিং
বাংলাদেশিদের জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ যে কাজগুলোর চাহিদা বেশি—তা হলো: কেয়ারগিভার, কৃষি, কনস্ট্রাকশন ও ফ্যাক্টরি কাজ।
বেসরকারিভাবে জাপানে যাওয়ার পদ্ধতি (Private Agency Method)
যারা সরকারিভাবে যেতে পারছেন না বা দ্রুত প্রসেস চান, তারা প্রাইভেট এজেন্সির মাধ্যমে জাপান যেতে পারেন। বাংলাদেশে বর্তমানে অনুমোদিত প্রায় ৭০টিরও বেশি লাইসেন্সধারী এজেন্সি জাপানে কাজের ভিসা প্রসেস করে থাকে।
তবে সতর্ক থাকুন:
- শুধুমাত্র BMET–এ রেজিস্টার্ড এজেন্সি নির্বাচন করুন
- সব টাকা সরকারি রসিদ ছাড়া পরিশোধ করবেন না
- ভিসা ইস্যুর আগ পর্যন্ত পুরো টাকা দিবেন না
জাপানে জীবনযাত্রার ব্যয় (Cost of Living in Japan 2025)
জাপান উন্নত দেশ হওয়ায় খরচ তুলনামূলক বেশি। তবে বেতনও বেশি—ফলে সঞ্চয় করা সম্ভব।
মাসিক আনুমানিক খরচ
| খরচের ধরন | পরিমাণ (টাকা) |
|---|---|
| থাকার খরচ | ২৫,০০০ – ৪৫,০০০ |
| খাবার | ১৫,০০০ – ২৫,০০০ |
| যাতায়াত | ৮,০০০ – ১৫,০০০ |
| অন্যান্য | ৫,০০০ – ১০,০০০ |
গড়ে একজন কর্মী মাস শেষে ৮০,০০০ – ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করতে পারেন।
বাংলাদেশিদের জন্য বাস্তবসম্মত আয় (Realistic Earnings for Bangladeshi Workers)
- নতুনরা: ১.৪ – ১.৭ লাখ টাকা
- স্কিলড শ্রমিক: ২ – ৩ লাখ টাকা
- অভিজ্ঞ ও টেকনিক্যাল কর্মী: ৩ লাখ+



