গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে ২০২৫ (সর্বশেষ আপডেট)

গ্রিস দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের এক ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন দেশ। ইউরোপীয় সভ্যতার সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এই দেশটি এখনো অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল এবং জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত।
অনেক বাংলাদেশি উন্নত আয়ের আশায়, পড়াশোনা কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে এই দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন। কিন্তু ভিসা প্রসেস শুরু করার আগে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নটি থেকেই যায় — গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে?

গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেনজেনভুক্ত একটি দেশ, যার ফলে এখানকার ভিসা পেলে ইউরোপের আরও ২৬টি দেশে ভ্রমণের সুবিধা পাওয়া যায়।
তবে গ্রিসে যেতে হলে আপনাকে ভিসার ধরন অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে — সেটা হতে পারে স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক পারমিট বা টুরিস্ট ভিসা

Table of Contents

বাংলাদেশ থেকে গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ইউরোপে যাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন, তবে বৈধভাবে গেলে সম্ভাবনা অনেক বেশি।
২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে গ্রিস যেতে খরচ হয় প্রায় ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত (ওয়ার্ক ভিসা বা লেবার ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে)।

তবে নিচে ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী খরচের একটি আনুমানিক হিসাব দেওয়া হলো

ভিসার ধরনআনুমানিক খরচ (টাকা)মন্তব্য
🇬🇷 ওয়ার্ক ভিসা৮ – ১২ লাখকাজের ধরন ও এজেন্সি অনুযায়ী ভিন্ন
স্টুডেন্ট ভিসা৪ – ৬ লাখটিউশন ফি ও ডকুমেন্ট নির্ভর
টুরিস্ট ভিসা৪ – ৫ লাখস্বল্প মেয়াদী ভ্রমণের জন্য

নোট: সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে গেলে খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়, কিন্তু বেসরকারি দালাল বা অননুমোদিত চ্যানেল ব্যবহার করলে খরচ অনেক বেড়ে যেতে পারে।

গ্রিস ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ থেকে গ্রিসের জন্য ভিসা পেতে হলে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়।
নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হলো

১️. ভিসা ক্যাটাগরি নির্ধারণ করুন

প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন আপনি কাজের ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা নাকি টুরিস্ট ভিসা নিতে চান। প্রতিটি ভিসার জন্য আলাদা শর্ত প্রযোজ্য।

২️. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন

ভিসা আবেদন করার আগে নিচের ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রাখুন –

  • বৈধ পাসপোর্ট (ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদ)
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সর্বনিম্ন ৬ মাস)
  • কাজের বা একাডেমিক সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল ফিটনেস রিপোর্ট
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
  • ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স
  • (স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে) অফার লেটার ও অ্যাডমিশন কনফার্মেশন

৩️. অনলাইন আবেদন জমা দিন

গ্রিসের অফিসিয়াল ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
ভিসা আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করে পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ অনলাইনে সাবমিট করুন।

৪️. ভিসা ফি ও বায়োমেট্রিক

অনলাইনে ভিসা ফি প্রদান করার পর, ইন্টারভিউর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
নির্দিষ্ট তারিখে বাংলাদেশে অবস্থিত গ্রিস দূতাবাসে গিয়ে বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন ও সাক্ষাৎকার দিতে হয়।

গ্রিস দূতাবাসের ঠিকানা:
৫১/বি, বোরাক মেহনুর, গুলশান, ঢাকা ১২১২

গ্রিস যেতে কি কি লাগে? (প্রয়োজনীয় কাগজপত্র)

ভিসার ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা ভিন্ন হতে পারে। নিচে সাধারণভাবে যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় তা দেওয়া হলো

  • ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (IELTS / TOEFL / GRE)
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র
  • একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট
  • কাজের অভিজ্ঞতার সনদ
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও সাপোর্টিং ডকুমেন্ট
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অফার লেটার (স্টুডেন্টদের জন্য)
  • ভ্রমণের ইতিহাস
  • রিকমেন্ডেশন লেটার (যদি প্রযোজ্য হয়)

এই ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত থাকলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

গ্রিস যেতে কত বছর বয়স লাগবে?

গ্রিসে যাওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়সসীমা ১৮ বছর, তবে ভিসার ধরন অনুযায়ী কিছুটা পার্থক্য থাকে।

  • স্টুডেন্ট ও টুরিস্ট ভিসা: ন্যূনতম ১৮ বছর
  • ওয়ার্ক ভিসা: ন্যূনতম ২১ বছর

বয়সের প্রমাণ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের তথ্য প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ থেকে গ্রিস যাওয়ার বৈধ উপায়

গ্রিসে যাওয়ার সবচেয়ে নিরাপদ ও বৈধ উপায় হলো সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে আবেদন করা
যেমন –

  • প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
  • বোয়েসেল (BOESL)
  • বিএমইটি (BMET)

এছাড়াও VFS Global বা গ্রিসের অনুমোদিত ভিসা প্রসেসিং সেন্টারগুলোতেও আবেদন করা যায়।
অজানা দালাল বা অবৈধ এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়ার ঝুঁকি একেবারেই নেওয়া উচিত নয়।

গ্রিস ১ ইউরো বাংলাদেশের কত টাকা?

২০২৫ সালের হিসাবে ১ ইউরো ≈ ১২৬ টাকা (বাংলাদেশি)
তবে এই মান আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময় বাজারের ওঠানামার কারণে পরিবর্তিত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ:
১,০০০ ইউরো × ১২৬ = ১,২৬,০০০ টাকা (প্রায়)

বাংলাদেশ থেকে গ্রিস যেতে কত সময় লাগে?

ঢাকা থেকে গ্রিসের রাজধানী এথেন্স পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট না থাকলেও, ট্রানজিটসহ গড়ে ২২–২৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
কিছু জনপ্রিয় রুট হলো:

  • ঢাকা → ইস্তানবুল → এথেন্স (Turkish Airlines)
  • ঢাকা → দোহা → এথেন্স (Qatar Airways)
  • ঢাকা → দুবাই → এথেন্স (Emirates)

শেষ কথা

ইউরোপে কাজ বা পড়াশোনার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, আর গ্রিস সেই স্বপ্ন পূরণের অন্যতম বাস্তবসম্মত গন্তব্য।
তবে ভিসার ধরন অনুযায়ী খরচ, কাগজপত্র ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগে থেকেই জানা জরুরি।
গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে সেই ধারণা স্পষ্ট থাকলে প্রতারণার ঝুঁকি কমে এবং ভিসা প্রসেস সহজ হয়।

Official Greece Immigration Website: Hellenic Republic – Ministry of Foreign Affairs

FAQs

প্রশ্ন ১: বাংলাদেশের গ্রিস দূতাবাস কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: ঢাকার গুলশান এলাকায়, ঠিকানা: ৫১/বি, বোরাক মেহনুর, ঢাকা ১২১২।

প্রশ্ন ২: গ্রিস কি সেনজেন ভুক্ত দেশ?

উত্তর: হ্যাঁ, গ্রিস ইউরোপের সেনজেন অঞ্চলের সদস্য দেশ।

প্রশ্ন ৩: বাংলাদেশ থেকে গ্রিস কিভাবে যাওয়া যায়?

উত্তর: সরকারি সংস্থা (BOESL, BMET) বা VFS Global-এর মাধ্যমে আবেদন করে বৈধভাবে গ্রিসে যাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৪: গ্রিসে যেতে কত খরচ হয়?

উত্তর: ওয়ার্ক ভিসায় ৮–১২ লাখ, স্টুডেন্ট ভিসায় ৪–৬ লাখ এবং টুরিস্ট ভিসায় ৪–৫ লাখ টাকার মধ্যে খরচ হয়।

প্রশ্ন ৫: গ্রিস যেতে ন্যূনতম বয়স কত?

উত্তর: ওয়ার্ক ভিসার জন্য কমপক্ষে ২১ বছর এবং স্টুডেন্ট বা টুরিস্ট ভিসার জন্য ১৮ বছর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top