বাংলাদেশ থেকে অনেকেই সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান।
এ ধরনের ভিসা নেওয়ার সুবিধা হলো, আপনি নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।
তবে এই “ফ্রি ভিসা” আসলে কী, এবং সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম কত ২০২৫ — তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই আর্টিকেলে আমরা জানব ফ্রি ভিসা পাওয়ার উপায়, খরচ, বেতন এবং আবেদন প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে।
সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা আসলে কী?
বাস্তবে “ফ্রি ভিসা” নামে সৌদি আরবে কোনো অফিসিয়াল ভিসা ক্যাটাগরি নেই।
এটি সাধারণত এমন এক ধরনের কাজের ভিসা যেখানে কফিলের (স্পনসর) অধীনে ভিসা নেওয়া হলেও আপনি সরাসরি তার জন্য কাজ করেন না।
অর্থাৎ, আপনি চাইলে অন্য জায়গায় নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে পারেন।
তবে এই ধরনের ভিসায় গেলে ঝুঁকি থাকে — যেমন কাজ না পাওয়া, আকামা (রেসিডেন্স পারমিট) নিজে তৈরি করতে হওয়া, এবং আইনি জটিলতা।
সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
সৌদি আরবে বৈধভাবে কাজ করতে হলে কফিল বা স্পনসরের অধীনে ভিসা নিতে হয়।
তবে ফ্রি ভিসার ক্ষেত্রে, কফিলের অনুমতিতে আপনি অন্য কাজে যুক্ত হতে পারেন।
ফ্রি ভিসা পাওয়ার ধাপগুলো:
- বিশ্বস্ত এজেন্সি বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে ফ্রি ভিসা প্রসেসিং শুরু করুন।
- কেএসএ (KSA) অনুমোদিত অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে ভিসা আবেদন সম্পন্ন করতে হয়।
- আবেদন শেষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিন।
- ভিসা অনুমোদনের পর পাসপোর্টে স্ট্যাম্প দেওয়া হয়।
সতর্কতা: ভিসা দালাল বা অজানা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করবেন না। অনেকেই “ফ্রি ভিসা” নামে প্রতারণার শিকার হন।
সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ফ্রি ভিসা প্রসেসিংয়ের সময় নিচের ডকুমেন্টগুলো আবশ্যক:
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র | মন্তব্য |
---|---|
বৈধ পাসপোর্ট | কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে |
জাতীয় পরিচয়পত্র | এনআইডির স্ক্যান কপি |
মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট | GAMCA অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার থেকে |
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স | সর্বশেষ ৬ মাসের মধ্যে ইস্যু করা |
পাসপোর্ট সাইজের ছবি | সাম্প্রতিক |
অন্যান্য কাগজপত্র | অফার লেটার বা স্পনসরের চিঠি থাকলে সংযুক্ত করুন |
সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম কত ২০২৫
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে ফ্রি ভিসা নিয়ে যেতে চাইলে কিছু মৌলিক দক্ষতা থাকা জরুরি — যেমন:
- পাইপ ফিটিং
- ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল কাজ
- নির্মাণ শ্রমিক
- প্লাম্বিং
- ড্রাইভিং বা সার্ভিস সেক্টর
এই দক্ষতা না থাকলে সেখানে গিয়ে কাজ পাওয়া কঠিন হতে পারে।
২০২৫ সালের হিসাবে, সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম প্রায় ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তাছাড়া সৌদিতে গিয়ে নিজের আকামা তৈরি করতে ৯,০০০ থেকে ১৫,০০০ রিয়াল পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
খরচের ধরন | আনুমানিক পরিমাণ |
---|---|
ভিসা প্রসেসিং | ৩ – ৫ লাখ টাকা |
আকামা তৈরি | ৯,০০০ – ১৫,০০০ রিয়াল |
মেডিকেল ও কাগজপত্র | ১৫,০০০ – ২৫,০০০ টাকা |
টিকিট ও অন্যান্য খরচ | ৭০,০০০ – ১,০০,০০০ টাকা |
সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার বেতন কত?
সৌদি ফ্রি ভিসায় গেলে নির্দিষ্ট কোম্পানিতে বাধ্যতামূলক কাজের সীমাবদ্ধতা নেই, তাই আয় নির্ভর করে আপনি কোন কাজ করছেন তার উপর।
সাধারণত বেতন সীমা হয় ১,২০০ রিয়াল থেকে ২,২০০ রিয়াল পর্যন্ত।
তবে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়লে আয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
কাজের ধরন | আনুমানিক বেতন (রিয়াল) |
---|---|
শ্রমিক / ক্লিনার | ১,২০০ – ১,৫০০ |
ইলেকট্রিশিয়ান / প্লাম্বার | ১,৫০০ – ২,০০০ |
ড্রাইভার / মেকানিক | ১,৮০০ – ২,২০০ |
নির্মাণ কাজ | ১,৫০০ – ২,০০০ |
নোট: ফ্রি ভিসায় গেলে বেতন স্থির নয় — আপনাকে নিজ উদ্যোগে কাজ খুঁজতে হয়।
ফ্রি ভিসায় গেলে যে ঝুঁকিগুলো থাকে
- কাজ না পাওয়ার ঝুঁকি
- বসবাস ও আকামা নবায়নে সমস্যা
- কফিলের আইনি বাধা
- বেতন না পাওয়া বা কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া
- দেশে ফিরে আসার সুযোগ সীমিত
তাই ফ্রি ভিসা নেওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
শেষ কথা
২০২৫ সালে সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা এখনও অনেকের স্বপ্ন।
তবে মনে রাখবেন, ফ্রি ভিসা সম্পূর্ণ “ফ্রি” নয় — এটি একটি অনানুষ্ঠানিক কাজের ভিসা।
যদি আপনি দক্ষ হন এবং সৌদিতে পরিচিত কেউ থাকে, তাহলে এই ভিসায় সফলভাবে কাজ করা সম্ভব।
সঠিক পথ বেছে নিন, প্রতারণা এড়িয়ে বৈধভাবে সৌদিতে যান।