অনেকে কাজের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে উজবেকিস্তান যেতে চান। তবে বিদেশে যাওয়ার আগে সবার প্রথম প্রশ্ন থাকে—উজবেকিস্তানের বেতন কত?
যারা দেশটিতে চাকরি করতে আগ্রহী, তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হলো সর্বশেষ তথ্য। এখানে আপনি জানতে পারবেন সর্বনিম্ন বেতন, কোন কাজের চাহিদা বেশি, এবং কোন কাজের বেতন তুলনামূলক বেশি।
উজবেকিস্তান মধ্য এশিয়ার একটি দেশ, যার ভূখণ্ডের বড় অংশই মরুভূমি এবং পাহাড়ি অঞ্চল দ্বারা আচ্ছাদিত। অর্থনীতি একসময় কৃষি-নির্ভর থাকলেও, বর্তমানে প্রাকৃতিক সম্পদ, তেল ও খনিজ রপ্তানি দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
উজবেকিস্তানের অর্থনীতি ও কাজের পরিবেশ
উজবেকিস্তান উন্নয়নশীল হলেও ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হচ্ছে। সরকার অবকাঠামো, শিল্প, কৃষি এবং পরিষেবা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।
এর ফলে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে অনেকেই সেখানে কাজ করতে যাচ্ছেন।
- অর্থনীতির মূল খাত: কৃষি, খনিজ সম্পদ, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস
- বর্ধনশীল খাত: নির্মাণশিল্প, উৎপাদনশিল্প, হসপিটালিটি (হোটেল-রেস্টুরেন্ট), পরিবহন
- কর্মঘন্টা: সপ্তাহে গড়ে ৪০ ঘন্টা (৫–৬ দিনে ভাগ করা হয়)
উজবেকিস্তানের বেতন কত ২০২৫?
বর্তমানে উজবেকিস্তানে বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের গড় বেতন প্রায় ২০,০০০ টাকা থেকে ৫০,000 টাকা (বাংলাদেশি টাকায় হিসাব) হয়ে থাকে।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, উজবেকিস্তানের বেতন কত তা নির্ভর করে আপনার কাজের ধরণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর।
যেমন:
- দক্ষ শ্রমিক (ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, কাঠমিস্ত্রি): তুলনামূলক বেশি আয়
- অদক্ষ শ্রমিক (সাধারণ লেবার, কৃষি শ্রমিক): তুলনামূলক কম আয়
বাংলাদেশের তুলনায় এখানে বেতন কিছুটা বেশি হলেও জীবনযাত্রার খরচও বিবেচনায় রাখতে হবে।
উজবেকিস্তানের সর্বনিম্ন বেতন ২০২৫
উজবেকিস্তান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতন বর্তমানে প্রায় ১১,000 টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়)।
শ্রম আইন অনুযায়ী—
- সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪০ ঘণ্টা কাজ করা যায়।
- সাধারণত সপ্তাহে ৬ দিন কাজ, প্রতিদিন গড়ে ৭ ঘণ্টা।
- যদি সপ্তাহে ৫ দিন কাজ হয়, তবে প্রতিদিন প্রায় ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
উজবেকিস্তানে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
উজবেকিস্তানে শ্রমবাজার মূলত উন্নয়ন প্রকল্প, কৃষি এবং উৎপাদনমুখী খাতে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণে অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে।
বেশি চাহিদাসম্পন্ন কাজগুলো:
- কনস্ট্রাকশন সেক্টর: মেসন, প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রি, সাধারণ লেবার
- কৃষি: তুলা চাষ, ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদন, কৃষি শ্রমিক
- সার্ভিস সেক্টর: হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মী, বিক্রয় কর্মী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
- কারখানা ও উৎপাদন: টেক্সটাইল শ্রমিক, মেশিন অপারেটর
উজবেকিস্তানে কোন কাজের বেতন বেশি?
যদি প্রশ্ন আসে—উজবেকিস্তানে কোন কাজের বেতন বেশি? তাহলে উত্তর হলো কনস্ট্রাকশন ও মাইনিং সেক্টর।
উচ্চ বেতনের কাজ:
- কনস্ট্রাকশন সেক্টরের শ্রমিক
- ইলেকট্রিশিয়ান ও প্লাম্বার
- কাঠমিস্ত্রি
- ড্রাইভার
- খনি শ্রমিক
- অভিজ্ঞ কৃষি শ্রমিক
- হোটেল ও রেস্টুরেন্টে দক্ষ কর্মী
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
সুযোগ
- বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ।
- বেতনের পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা থাকে।
- দীর্ঘমেয়াদী কর্মচুক্তি পাওয়ার সুযোগ।
চ্যালেঞ্জ
- ভাষার সমস্যা (রাশিয়ান বা উজবেক ভাষা জানা থাকলে সুবিধা হয়)।
- স্থানীয়দের তুলনায় বিদেশিদের জন্য কাজের অনুমতি সীমিত।
- স্বাস্থ্যসেবা ও বিমা সুবিধা কিছু ক্ষেত্রে সীমিত।
জীবনযাত্রার খরচ বনাম বেতন তুলনা
যদিও উজবেকিস্তানের বেতন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, তবে জীবনযাত্রার খরচ কিছুটা বেশি। বিশেষ করে শহরাঞ্চল যেমন—তাশখন্দ বা সমরকন্দে ভাড়া ও খাবারের খরচ তুলনামূলক বেশি।
- শহরে আবাসন ভাড়া: গড়ে ৮,000–১৫,000 টাকা
- খাবার ও পরিবহন: মাসে প্রায় ৫,000–১০,000 টাকা
- মোট খরচ: গড়ে মাসে ১৫,000–২৫,000 টাকা
তাই যারা সেখানে যেতে চান, তাদের হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস: উজবেকিস্তানে কাজের ভিসা নেওয়ার আগে
- রেজিস্টার্ড এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা ও চুক্তি করুন।
- কর্মচুক্তিতে বেতন, কাজের সময়, আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ আছে কিনা দেখুন।
- ভাষা শিখলে কাজের সুযোগ ও বেতন বাড়তে পারে।
- প্রাথমিকভাবে হাতে কিছু টাকা নিয়ে যান, কারণ প্রথম মাসে খরচ তুলনামূলক বেশি হতে পারে।
শেষ কথা
২০২৫ সালে উজবেকিস্তানের বেতন কত—এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনি কোন খাতে কাজ করছেন তার উপর। গড়ে মাসিক ২০,000 থেকে ৫০,000 টাকা আয় সম্ভব, তবে সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ১১,000 টাকা।
সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে কনস্ট্রাকশন, কৃষি এবং সার্ভিস সেক্টরে।
যদি আপনি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে যান, তবে উজবেকিস্তানে ভালো আয় এবং অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব। [ILO Homepage | International Labour Organization]